ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ , ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: ২৪ দিন পর আরও এক শিক্ষিকার মৃত্যু চীনা বিনিয়োগে বড় বাধা কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ ‘ফ্যাসিবাদী’ হাসিনার অপরাধে বঙ্গবন্ধু হত্যা জায়েজ করা যায় না-বাংলাদেশ জাসদ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পরিকল্পিত অস্থিরতা শিক্ষা প্রশাসনে শর্তের লড়াইয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে নেত্রকোণায় ছাদ ধসে তিন শ্রমিক নিহত, আহত দুই নতুনরূপে সেজেছে উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চ রাজবাড়ীতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, শঙ্কায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪১ বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত মুজিবনগরে মহিলাসহ মোট ৪ জনকে বিএসএফর পুশইন গৌরনদী বাস-কোচ কাউন্টার মালিক ও শ্রমিক সমিতি গঠন সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে বিজিবির যৌথ অভিযানে অবৈধ ভারতীয় ব্লেজারের কাপড় আটক মাদারীপুরে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসী পাইকগাছায় কপোতাক্ষের বাঁধে ধস আতঙ্কে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বাঙ্গরায় মেয়াদ উত্তীর্ণ স্পিরিট পানে ২ জনের মৃত্যু
ভারতের ওপর উচ্চশুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ

  • আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ০৯:০০:১৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ০৯:০০:১৪ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ
* বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
* যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে দুটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার
* অর্ডার বাড়তে শুরু করেছে, দাবি ব্যবসায়ীদের


ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় অনেক পণ্যের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারও।
বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা বলছেন, উচ্চশুল্কের কারণে ভারতীয় রফতানিকারকরা বেশ কিছু পণ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন, যেখানে বাংলাদেশের সমজাতীয় নানান পণ্য সুবিধা পাবে। এদেশের সবচেয়ে বড় বাজার তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্ত ও পাটপণ্য, প্লাস্টিক, হোম টেক্সটাইল, আসবাবসহ বেশকিছু পণ্যের মার্কিন ক্রয়াদেশ বাড়বে।
এরই মধ্যে ভারত থেকে সরে আসা মার্কিন আমদানিকারকরা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন দেশি রফতানিকারক। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা পণ্যের চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করে। ভারতের ওপর উচ্চশুল্কের কারণে তাদের পণ্যগুলো স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক কম হওয়ায় সেটি বেশি আকর্ষণীয় হবে। বাংলাদেশের রফতানিকারকরা তাদের পণ্যের দাম ভারতের তুলনায় কম রাখতে পারবে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। এসব কারণে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ক্রয়াদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেড়েছে। বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোও তাদের বাজার বাড়ানোর জন্য জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশি অনেক কোম্পানি দ্রুত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের রফতানি দ্বিগুণ করার টার্গেটও নিয়ে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানিকারক এমন একটি প্রতিষ্ঠান পারটেক্স গ্রুপের ড্যানিশ ফুড। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি দেখেন সিনিয়র ম্যানেজার আদনান ইবনে নূর। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বায়াররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু ভারতের সমজাতীয় পণ্য আমরা রপ্তানি করছি, ওদের (ভারতের) ডিউটি এখন বেশি, সে কারণে আমাদের পণ্যে আগ্রহ বাড়ছে। আদনান বলেন, আমরাও ড্যানিশের পক্ষ থেকে সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও গুণগত পণ্য রফতানির মাধ্যমে আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা দ্বিগুণ করার টার্গেট নিয়েছি।
আদনান জানান, ড্যানিশ ফুড ২০১১ সাল থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানি বাণিজ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সাল থেকে রফতানির প্রায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাচ্ছে, যা ৩০ শতাংশে নিতে চায় কোম্পানিটি।
এদিকে কয়েকজন রফতানিকারক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এথেনিক মার্কেটে ভারত ও বাংলাদেশের সমজাতীয় পণ্যের মধ্যে এখন বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরেক সম্ভাবনাময় পণ্য প্লাস্টিক। এসিআই প্রিমিও প্লাস্টিকের বিজনেস ডিরেক্টর চৌধুরী হাসান তারেক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটা নিতে জোরেশোরে কাজ করছি। এটি প্লাস্টিকের জন্য অনেক বড় বাজার। শুধু প্রিমিও প্লাস্টিক মাসে ১০ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানির টার্গেট করেছে, যা ক্রমাগত বাড়বে।’
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক রফতানিকারক প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারত বড় ফ্যাক্ট ছিল। এখন আমরা রফতানিতে প্রচুর সুবিধা পাবো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিকপণ্য সরবরাহকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করবে, যা আগে ভারতে ছিল। প্লাস্টিকপণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিকপণ্য, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে এ রফতানি কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চামড়ার জুতা ও বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) দেশ থেকে ৬৭ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রফতানি হয়েছে। পাশাপাশি ৯ কোটি ডলারের অন্যান্য চামড়াজাত পণ্যও রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকার সাভারের এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টস নামের প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়াপণ্য রফতানি করে। তাদের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম মুশফিকুর রহমান বলেন, আশা করছি আরও নতুন নতুন মার্কিন ক্রেতা আসবে, যারা ভারতমুখী ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্য রফতানি দ্রুত বাড়ছিল, এ অবস্থায় আরও বাড়বে। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন থেকেও ব্যবসা সরাচ্ছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানেও আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে, তারা এখন বাংলাদেশে আসবে।
হোম টেক্সটাইলের ক্রয়াদেশও ভারত থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। একইভাবে ভারতের চেয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে আসবাব শিল্পেও ক্রয়াদেশ পাওয়ার আশা করছেন। গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের আসবাব।
শীর্ষস্থানীয় আসবাব ব্র্যান্ড হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাড়ছিল না। কারণ আমরা উচ্চশুল্ক দিয়ে কাঁচামাল আমদানি করে প্রতিযোগিতায় সুবিধা করতে পারতাম না। এখন যে সুযোগ এসেছে, সরকার যদি কাঁচামাল আমদানির জন্য বন্ড সুবিধা ও শুল্ক কমিয়ে দেয়, সেটা আমরা দারুণভাবে ব্যবহার করতে পারবো।
যুক্তরাষ্ট্রে হস্ত ও পাটপণ্যেরও সম্ভাবনা বাড়ছে জানিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল কটেজ ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশের (নাসিব) সাবেক সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন বলেন, সরকারি যথার্থ নীতিসহায়তা পেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতে পারবে। বিশেষ করে হাতে তৈরি পাটপণ্য ও কারুশিল্পের প্রচুর পণ্য রফতানির সুযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে চায় সরকারও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের শুল্ক বেশি হওয়ায় এটি আমাদের জন্য খুব বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগ সত্যিকার অর্থে ব্যবহার করতে কী কী করতে হবে সেটা আমরা শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি শহর নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বিজনেস প্রমোশন সেন্টার করবো। যেখান থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সব পণ্যের প্রচার ও প্রসারে কাজ করা হবে। এছাড়া আমরা কিছু নীতিসহায়তা দিতে নানান বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছি। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বন্ড সুবিধা দিতে প্রস্তাব করেছি। এটা নিয়ে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। আশা করি আগামী সপ্তাহে একটি সুখবর আসবে। তখন অনেক খাতে সহজে কাঁচামাল আমদানি সম্ভব হবে। রপ্তানিমুখী সব সেক্টরকে একইভাবে সহায়তা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি পলিসি চেঞ্জ করার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যেসব খাতভিত্তিক মেলা হয়, সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াবে ইপিবি। পাশাপাশি ইপিবিতে এসএমই সেল তৈরির কাজ চলছে, যেখানে বহুমুখী পণ্যের উন্নয়নে কাজ হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স